Wellcome to National Portal
মেনু নির্বাচন করুন
Main Comtent Skiped

এক নজরে জামদানি শিল্পনগরী ও গবেষণা কেন্দ্র......

জামদানির নামকরণ নিয়ে নানা মত আছে। “জামদানি” শব্দটি ফার্সি শব্দ থেকে এসেছে। ফার্সি “জাম” অর্থ কাপড় এবং “দানা” অর্থ বুটি, অর্থ্যাৎ জামদানি বলতে বুঝায় বুটি দানার কাপড়। জামদানি ও মসলিনের প্রচলন প্রায় একই সময়ে শুরু। জামদানির নাম পাওয়া যায় কৌটিল্যের অর্থ্য শাস্ত্রে, বিভিন্ন আরব, চীনা ও ইতালীয় পর্যটক ও ব্যবসায়ীর বর্ণনায়। কৌটিল্যের বইতে বঙ্গ ও পুণ্ড্র এলাকায় সূক্ষ্মতম বস্ত্রের উল্লেখ আছে। এগুলোর মধ্যে ক্ষৌম, দুকুল, পত্রোর্ণ ও কার্পাসিকা। রপ্তানির সময় কার্পাসিকার নাম হয় মসলিন। মসলিন ছিল এক রঙের। আর তারমধ্যে কারুকাজ করা কাপড়কে বলা হতো জামদানি। মূলত ঢাকা জেলাতেই মসলিন চরম উৎকর্য লাভ করে। ঢাকার সোনারগাঁও, ধামরাই, রূপগঞ্জ মসলিনের জন্য বিখ্যাত ছিল। মোগল আমলে জামদানির ব্যাপক প্রসার ঘটে। সম্রাট জাহাঙ্গীর জামদানির পৃষ্ঠপোষকতা করেন। ১৪ শ শতকে লেখা প্রখ্যাত পর্যটক ইবনে বতুতা তাঁর ভ্রমণ বৃত্তান্তে সোনারগাঁও এর বস্ত্র শিল্পের প্রশংসা করতে গিয়ে মসলিন ও জামদানির কথা বলেছেন। তবে জামদানি শাড়ির সব বিখ্যাত ও অবিস্মরণীয় নকশা ও বুননের অনেকগুলোই বর্তমানে বিলুপ্ত। এখন রূপগঞ্জ, সোনারগাঁও ও সিদ্ধিরগঞ্জে এই শিল্পের নিবাস।

জামদানি শিল্পটি এমন একটি শিল্পকর্ম যে শিল্পকর্মের সাথে পরিবারের সকল সদস্য জড়িত, ছেলেবেলা থেকেই পরিবারের প্রতিটি সদস্য নিজস্ব পরিমন্ডলে আপন স্বকীয়তায় মনের মাধুরী মিশিয়ে সৃষ্টি করে এ শিল্পকর্ম। আর সেজন্য এ শিল্পনগরীতে  সকল প্রকার অবকাঠামোগত সুবিধা দিয়ে কারূ শিল্পীদের পরিবার পরিজন নিয়ে বসবাসসহ কারখানা নির্মাণের সুযোগ দিয়ে ঢাকায় মসলিনের উত্তরসূরী বাংলাদেশের বস্ত্র শিল্পের ঐতিহ্যবাহী জামদানি দেশ-বিদেশে ব্যাপক সুনামের অধিকারী ও সৃজনশিল মনোমুদ্ধকর শিল্প শৈলির ঐতিহ্য উত্তরোত্তর সমৃদ্ধি বিধানের লক্ষ্যে বিভিন্ন জায়গায় ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা তাঁতিদের একত্রিভূত করণের জন্য ১৯৯১ সালে বাংলাদেশ ক্ষুদ্র ও কুটির শিল্প করপোরেশন (বিসিক) কর্তৃক নারায়ণগঞ্জের রূপগঞ্জ উপজেলার তারাব পৌরসভার নোয়াপাড়া গ্রামে ২০ একর জমির উপর প্রায় ৬ কোটি টাকা ব্যয়ে সর্বপ্রকার শিল্প অবকাঠামোগত উন্নয়নসহ এক জামদানি শিল্পনগরী ও গবেষণা কেন্দ্র গড়ে তোলা হয়েছে। যার ফলে শিল্পনগরীতে এলাকাবদ্ধ জায়গায় প্রতিযোগিতার মাধ্যমে কারুশিল্পীরা আপন মনের মাধুরী মিশিয়ে উন্নতমানের কাগড় তৈরী করতে পারে।

জামদানি এখন শুধু শাড়ীতেই সীমাবদ্ধ নয় । আমাদের কারুশিল্পীগণ তাদের নিজস্ব চিন্তাশক্তি ও বাজার চাহিদার মাধ্যমে শাড়ী বুননের সাথে সাথে মেয়েদের টু পিছ (সালোয়ার কামিজ), ছেলেদের শার্টের কাপড়, ফতুয়া, পাঞ্জাবী, নেকটাই তৈরীসহ ও অন্যান্য বস্ত্র তৈরীতেও জামদানির নকশা ব্যবহার করছেন। বর্তমানে দেশে এবং বর্হিবিশ্বের সম্ভ্রান্ত পরিবারবর্গ আসবাবপত্রের সাথে  সামঞ্জস্য রেখে ঘরের দরজা-জানালার পর্দা এবং ওয়াল মেট হিসাবে জামদানি কাপড় ব্যবহার করে থাকেন।

পণ্য বিপণনে বিসিক থেকে জামদানি মেলা আয়োজনের মাধ্যমে তাঁতিদের সহায়তা করে থাকে। ছোট ছোট তাঁতিরা ঘরে বসে তাদের উৎপাদিত পণ্য বিক্রয়ের ক্ষেত্রে অনেক সমস্যায় পড়ে। বিসিক বিভিন্ন সময় বিভিন্ন মেলা আয়োজন করা ছাড়াও জামদানি মেলার আয়োজন করে থাকে। প্রায় প্রতি বছর ভারতের অরবিন্দ ইন্সটিটিউট এবং দিল্লির হরিয়ানা রাজ্যে অনুষ্ঠিত সুরাজকুন্ড মেলায় বিসিকের পৃষ্ঠপোষকতায় কয়েকজন উদ্যোক্তা অংশগ্রহণ করে থাকেন। সেখানে বাংলাদেশের জামদানি পণ্য ক্রেতাদের আকৃষ্ট করে এবং প্রচুর বিকিকিনি হয়।

শিল্পনগরীতে কারুশিল্পীদের জন্য মোট ৪১৬ টি প্লট রয়েছে। তার মধ্যে জামদানির জন্য বরাদ্দকৃত শিল্প প্লট ৪০৭ টি, পাম্পের জন্য ০২ টি, পল্লী বিদ্যুৎ এর জন্য ০৭ টি সংরক্ষিত আছে। ৪১৬ টি  প্লটের মধ্যে “এ” টাইপ প্লট ৩৫৪ টি, “এস” টাইপ প্লট ৬২ টি । “এ” টাইপ প্লটের মধ্যে পাম্পের জন্য ০২ টি এবং “এস” টাইপ প্লটের মধ্যে ০৭ টি পল্লী বিদ্যুৎ এর জন্য বরাদ্দ আছে।